পরিচয়
'সালাতুল জানাযা' দুটিই আরবি শব্দ। প্রচলিত ভাষায় বলা হয় জানাযার সালাত বা জানাযার নামায। মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে কবরস্থ করার পূর্বে চার তাকবিরসহ যে সালাত আদায় করা হয়, তাকে জানাযার সালাত বলে। জানাযার সালাত ফরজে কিফায়া। এলাকার কিছুসংখ্যক লোক এ সালাত আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে সালাত আদায় হয়ে যায়। কেউ আদায় না করলে এলাকার সবাই গুনাহগার হয়। এ সালাতে রুকু-সিজদাহ্ নেই।
গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মানুষ মরণশীল। প্রত্যেককেই একদিন না একদিন মরতে হবে। মৃত ব্যক্তির প্রতি জীবিতদের অনেক কর্তব্য আছে। মৃতকে গোসল দেওয়া, কাফন পরানো, তার জানাযার সালাত আদায় করা এবং সবশেষে তাকে কবরস্থ করা একান্ত কর্তব্য। মূলত জানাযার সালাত হলো মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া। যত বেশি লোক একত্রিত হয়ে দোয়া করবে ততই তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই জানাযার সালাতে লোকসংখ্যা যত বেশি হবে, ততই ভালো, কিন্তু লোকসংখ্যা বেশি হওয়ার জন্য জানাযা বিলম্ব করা ঠিক নয়। অধিক লোক একত্রিত করার জন্য মৃত্যুর সংবাদ চারদিকে প্রচার করা উচিত। আল্লাহর নিকট একদিন আমাদেরও ফিরে যেতে হবে, এ সালাত সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, 'যে ব্যক্তি জানাযার সালাত আদায় করবে, তার জন্য এক কিরাত (সাওয়াব) এবং যে ব্যক্তি দাফনকার্য শেষ হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করবে, তার জন্য দুই কিরাত (সাওয়াব)। এক একটি কিরাত হলো উহুদ পাহাড় পরিমাণ।' (তিরমিযি)
জানাযার সালাত আদায়ের নিয়ম
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করিয়ে কাফন পরানোর পর ইমাম তাকে সামনে রেখে তার বুক বরাবর দাঁড়াবেন। মুক্তাদিগণ ইমামের পেছনে দাঁড়াবে। তারপর মনে মনে নিয়ত করবে, 'আমি কিবলামুখী হয়ে এই ইমামের পেছনে চার তাকবিরের সাথে জানাযার সালাত ফরজে কিফায়া আদায় করছি।'
প্রথম তাকবির বলে দুই হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে হাত বাঁধবে। পরে সানা পড়ে হাত বাঁধা অবস্থাতেই ইমামের সাথে দ্বিতীয় তাকবির বলবে। তারপর দরুদ শরিফ পড়ে ইমামের সাথে তৃতীয় তাকবির বলবে। তারপর নিম্নের দোয়াটি পড়বে:
اللَّهُمَّ اغْفِرُ حَيْنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَ كَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَانْثَانَا - اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِسْلَامِ - وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِيمَانِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লিহাইয়্যিনা ওয়া মায়ি্যতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া ছাগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসানা। আল্লাহুম্মা মান আহয়িয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামি ওয়ামান তাওয়াফ্ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ্ ফাহু আলাল ইমান।
এই দোয়া পড়ে চতুর্থ তাকবির বলে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করবে। তাকবির বলার সময় হাত উঠবে না। মৃত ব্যক্তি যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক হয়, তবে তৃতীয় তাকবিরের পর নিম্নের দোয়াটি পড়বে:
اللَّهُمَّ اجْعَلُهُ لَنَا فَرَطًا وَاجْعَلُهُ لَنَا أَجْرًا وَ ذُخْرًا وَاجْعَلُهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَعًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ আলহ্র লানা ফারাতাঁও ওয়াজআলহু লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজ আলহ্র লানা শাফিআঁও ওয়া মুশাফ্ ফাআন।
মৃত ব্যক্তি অপ্রাপ্তবয়স্কা বালিকা হলে পড়বে:
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرَطًا وَاجْعَلُهَا لَنَا اَجْرًا وَ ذُخْرًا وَاجْعَلُهَا لَنَا شَافِعَةً وَمُشَفَعَةً
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজআলহা লানা ফারাতাঁও ওয়াজ আলহা লানা আজরাঁও ওয়াজুখরাঁও ওয়াজআলহা লানা শাফিআতাঁও ওয়া মুশাফাআহ।
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় পড়বে:
بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ
উচ্চারণ: বিসিমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ।
কবরের উপর মাটি দেওয়ার সময় পড়বে:
مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى
উচ্চারণ: মিনহা খালাকনাকুম ওয়াফিহা নুয়িদুকুম ওয়ামিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা। (সূরা তা-হা, আয়াত ৫৫)
এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের জানাযায় উপস্থিত হওয়া অন্যতম কর্তব্য। ভোগবিলাসে মত্ত উঁচু শ্রেণির মানুষ এবং সহায় সম্বলহীন দরিদ্র মানুষ উভয়কে একইভাবে সাদা কাপড়ে, খালি হাতে পরপারের যাত্রী হতে হবে-এ সালাত সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। ক্ষণিকের জীবন অনাড়ম্বরভাবে কাটিয়ে ইমানসহ কবরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া সবার একান্ত কর্তব্য।
দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে জানাযার সালাতের গুরুত্ব নিয়ে শ্রেণিতে আলোচনা করবে। |
বাড়ির কাজ: জানাযার সালাত আদায়ের নিয়ম বর্ণনা কর। |
Read more